Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :

উপন্যাসে উপস্থাপিত হয় সামগ্রিক জীবনের রূপ। উপন্যাসের একদিকে যেমন থাকে জীবনের জটিলতা, অন্যদিকে তেমনি আত্মপ্রকাশ করে সচেতন মন। জীবন সম্বন্ধে ...

উপন্যাসে উপস্থাপিত হয় সামগ্রিক জীবনের রূপ। উপন্যাসের একদিকে যেমন থাকে জীবনের জটিলতা, অন্যদিকে তেমনি আত্মপ্রকাশ করে সচেতন মন। জীবন সম্বন্ধে ঔপন্যাসিকের সামগ্রিকতা বোধ নির্ভর করে তাঁর জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে ধ্যান ধারণার উপর। এই জীবন আবার প্রতি মুহূর্তে রূপান্তরপ্রবণ। ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক ও বিরোধ নিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই প্রতি মুহূর্তের পরিবর্তনশীল সমাজ সভ্যতার বৃহৎ দায় ব্যক্তি কেমন করে বহন করছে তার রূপায়ণও ঔপন্যাসিকের দায়িত্ব। এই গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন রবন্দ্রিনাথ ঠাকুর

   পরিচয় ;   
    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ (৭ মে ১৮৬১) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরএবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী । রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল । অল্পবয়স থেকেই ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। দীর্ঘ জীবনে অজস্র কবিতা, গান, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন। এশিয়ার মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে 'Song Offerings' এর জন্যে। দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত আর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাঁর রচনা। কবির প্রথম জীবনে লেখা কাব্যগ্রন্থগুলি হলো – ‘সন্ধ্যাসঙ্গীত’, ‘প্রভাতসঙ্গীত’, ‘ছবি ও গান’, ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ এবং ‘কড়ি ও কোমল’। ১৮৮৮ থেকে ১৮৯৬ – মাত্র আট বছরে কবি প্রতিভার যে অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে তারই চিহ্ন সুমুদ্রিত এই পর্বের চারখানি - কাব্যগ্রন্থে – ‘মানসী’, ‘সোনারতরী’, ‘চিত্রা’ও ‘চৈতালি’তে। এই পর্বের কাব্যগুলিতে কবির আত্মোপলব্ধিই শুধু নয়, তাঁর কাব্যে নির্মাণ কৌশলেরও যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। আবেগ, গভীর আত্মপ্রত্যয়, জীবন জিজ্ঞাসা, কল্পনার পক্ষ বিস্তার, শিল্পরূপ নির্মাণে দক্ষতা, ভাষা ও ছন্দের ওপর আধিপত্য প্রভৃতি কবির যাবতীয় গুণাবলির প্রকাশ ঘটেছে এই পর্বের কবিতাবলিতে। এরপর কবি রচনা করেন কণিকা, কথা ও কাহিনী, কল্পনা, ক্ষণিকা ও নৈবেদ্য। গীতাঞ্জলি পর্বের প্রধান তিনখানি কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি, গীতিমাল্য ও গীতালি, ১৯১৬ তে বলাকা, ১৯২৫ এ পূরবী এবং ১৯২৯-এ মহুয়া রচনা করেন কবি রবীন্দ্রনাথ। ‘পুনশ্চ’ থেকে রবীন্দ্রকাব্যের শেষ পর্বের শুরু। এ পর্বের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হলো ‘শেষ সপ্তক’, ‘প্রান্তিক’, ‘নবজাতক’, ‘সানাই’, ‘রোগশয্যায়’, ‘আরোগ্য’ইত্যাদি। ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে (৭ আগস্ট ১৯৪১) কবি পরলোক গমণ করেন ।
 
   উপন্যাসসমূহ :    
  • ‘করুণা’ (১৮৭৭ - ৭৮)
  • ‘বউঠাকুরাণীর হাট’ (১৮৮৩)
  • ‘রাজর্ষি’ (১৮৮৭)
  • ‘চোখের বালি’ (১৯০৩)
  • ‘নৌকাডুবি’ (১৯০৬)
  • ‘গোরা’ (১৯১০)
  • ‘চতুরঙ্গ’ (১৯১৫)
  • ‘ঘরে বাইরে’ (১৯১৬)
  • ‘যোগাযোগ’ (১৯২৯)
  • ‘শেষের কবিতা’ (১৯২৯)
  • ‘দুইবোন’ (১৯৩৩)
  • ‘মালঞ্চ’ (১৯৩৪)
  • ‘চার অধ্যায়’ (১৯৩৪)
     উপন্যাসের শ্রেণীবিভাগ:   
        রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলিকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে । যথা ----
১। ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস : 
  • ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট' (১৮৮৩),
  • 'রাজর্ষী' (১৮৮৭)। 
২। পারিবারিক ও সামাজিক উপন্যাস : 
  •  'চোখের বালি' (১৯০৩), 
  • 'নৌকাডুবি'’ (১৯০৬)
  • ‘গোরা’ (১৯১০)
  • ‘যোগাযোগ' (১৯২৯), 
  • 'চার অধ্যায়' (১৯৩৪)। 
৩। চেতনাশ্রয়ী অন্তর্বাস্তবতার উপন্যাস : 
  • ‘ঘরে বাইরে' (১৯১৬), 
  • 'চতুরঙ্গ' (১৯১৬)।
৪। ‘কাব্যোপন্যাস’:
  •  'শেষের কবিতা' (১৯২৯), 
  • 'দুই বোন' (১৯৩৩),
  •  'মালঞ্চ' (১৯৩৪)। 
(তবে ‘গোরা’ (১৯১০), ঘরে বাইরে’ (১৯১৬), 'চার অধ্যায়' (১৯৩৪)কে দেশাত্মবোধক উপন্যাস বলা যেতে পারে ) 
 
   পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাস :  
  • ‘করুণা’ --- ‘ভারতী’ ।
  • ‘বউঠাকুরাণীর হাট’ ---- ‘ভারতী’ ।
  • ‘রাজর্ষি’ ---- ‘বালক’ ।
  • ‘চোখের বালি’ ---- ‘নব পর্যায় বঙ্গদর্শন’ ।
  • ‘নৌকাডুবি’ --- ‘নব পর্যায় বঙ্গদর্শন’ ।
  • ‘গোরা’ ---- ‘প্রবাসী’ ।
  • ‘চতুরঙ্গ’ ---- ‘সবুজপত্র’ ।
  • ‘ঘরে বাইরে’ ----- ‘সবুজপত্র’  ।
  • ‘যোগাযোগ’ ------ ‘বিচিত্রা’ ।
  • ‘শেষের কবিতা’ ----  ‘প্রবাসী’ ।
  • ‘দুইবোন’ ------ ‘বিচিত্রা’ ।
  • ‘মালঞ্চ’ ------  ‘বিচিত্রা’ ।
  • ‘চার অধ্যায়’ ---- (কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নি, সরাসরি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়) ।

     উপন্যাসের পূর্বনাম :    
  • ‘চোখের বালি’ ---- ‘বিনোদিনী’ ।
  • ‘চতুরঙ্গ’ ------ ‘দামিনী’ ।
  • ‘যোগাযোগ’ ---- ‘তিনপুরুষ’ ।
  • ‘শেষের কবিতা’ ---- ‘মিতা’ ।

   উৎসর্গীকৃত উপন্যাস :   
  • ‘করুনা’ ---- কাদম্বরী দেবী ।
  • ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ ---- ‘সৌদামিনী দেবী’ ।
  • ‘গোরা’ ---- রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
  • ‘ঘরে বাইরে’ --- প্রমথ চৌধুরী ।
  • ‘দুইবোন’ ---- রাজশেখর বসু ।

     উপন্যাস মনে রাখার কৌশল :     
        ‘করুনা’ বউঠাকুরাণীকে (‘‘বউঠাকুরানীর হাট’’) নিয়ে নদীপথে চললেন । ঝড়ে মাঝি ‘‘রাজর্ষি”র চোখে বালি (‘‘চোখের বালি”) উড়ে এসে পড়ায় তাল ঠেকাতে না পেরে ‘‘নৌকাডুবি’’ ঘটে । ‘‘গোরা’’র চেষ্টায় কোনো ক্রমে বেঁচে তারা ‘‘চতুরঙ্গ’’ বাহিনীর সাথে বাড়ির পথে রওনা দেন । এই সংবাদ শোনার পর বাড়ির লোকেরা চিন্তায় ‘‘ঘর ও বাহির’’ করতে থাকে , কি উপায়ে ‘‘যোগাযোগ’’ করা যায় সে কথা ভাবতে থাকে ।  কিন্তু রাত অনেক হওয়ায় কিছু করা সম্ভব হল না । ঘুমও আসতে চায় না, শেষ পর্যন্ত ‘শেষের কবিতা’’ পড়ে ‘‘দুইবোন” সময় কাটানোর কথা ভাবলেন । ‘‘মালঞ্চ” খুব তাড়াতাড়ি ‘চারঅধ্যায়” পড়েও ফেলেন ।

    আলোচনা :   
   ‘করুণা’ :   
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর রচিত প্রথম উপন্যাস “করুণা"।
  • উপন্যাস টি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। 
  • ১৮৭৭ থেকে ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ধারাবাহিকভাবে উপন্যাস টি ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
  • উপন্যাস টি কবিগুরু তাঁর বৌদি কাদম্বরী দেবীর অনুপ্রেরণায় রচনা করেন।
  • মাত্র ১৬ বছর বয়সে উপন্যাসটি রচনা করেন।

    ‘বউঠাকুরাণীর হাট’ :    
  •  “বউ ঠাকুরাণীর হাট" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম সার্থক উপন্যাস  ।
  • ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত উপন্যাস।
  • ১৮৮৩ রবীন্দ্রনাথের  যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য ও বাকলার জমিদার রামচন্দ্রের বিবাদকে উপজীব্য করে রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস।
  • উপন্যাসটিতে প্রতাপচন্দ্র ঘোষ রচিত ‘বঙ্গাধিপ পরাজয়’ (১৮৬৯) গ্রন্থের প্রভাব রয়েছে ।
  •  ১৩১৬ বঙ্গাব্দে বৌ-ঠাকুরাণীর হাট অবলম্বনে রচিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রায়শ্চিত্ত নাটকটি। প্রায়শ্চিত্ত ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে পুনর্লিখিত হয়ে পরিত্রাণ নামে মুদ্রিত হয়।
  • চরিত্র - প্রতাপাদিতা, উদয়াদিত্য বিভা, বসন্ত রায় ।

   ‘রাজর্ষি :   
  • ১৮৮৭ ত্রিপুরার রাজপরিবারের ইতিহাস নিয়ে রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস।
  • ১২৯৭ বঙ্গাব্দে এই উপন্যাসের প্রথমাংশ অবলম্বনে বিসর্জন নাটকটি রচিত হয়।
  • রাজা গোবিন্দমানিক্য দেবী মন্দিরে বলিদানের ঘোর বিরোধী ছিলেন। মন্দিরের পুরোহিত রঘুপতির নিদারুণ দ্বন্দ্বের পটভূমিকার উপন্যাসের কাহিনি ।
  • এই উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর স্ত্রী চরিত্র বিহীন উপন্যাস।
  • বঙ্কিমচন্দ্রের ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসের প্রভাব এতে রয়েছে ।
  • চরিত্র – গোবিন্দ মানিকা, রঘুপত্তি সিংহ রায়।
 
    চোখের বালি :   
  • এই উপন্যাস টি বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস।
  • রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। 
  • এই উপন্যাসটির পূর্বনাম ছিল ‘বিনোদিনী’ ।
  • এই উপন্যাসের বাল্য বিধবা বিনোদিনী চরিত্রের আদর্শ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর চরিত্রহীন উপন্যাসের কিরণময়ী চরিত্রানে প্রেরণা দিয়েছিল।
  • চরিত্র – মহেন্দ্র, আশালতা, বিনোদিনী, বিহারী, রাজলক্ষী ।
  • ২০০৩ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষ এই উপন্যাস অবলম্বনে চোখের বালি চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।
 
    নৌকাডুবি  :    
  • এটি সামাজিক উপন্যাস।
  • নৌকাডুবির ঘটনা এই উপন্যাসের পটভূমি রচনা করেছে । 
  •  বহু সমালোচকের মতে এই উপন্যাস টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর দুর্বলতম রচনা।
  • এই উপন্যাসটি কবিগুরু তাঁর ‘ভগ্নতরী' কবিতা অবলম্বনে রচনা করেন।
  • এই প্রথম বাংলা উপন্যাসে দেখা গেল নব শিক্ষিতা , মার্জিতা, সৌজন্য সংযত, ব্যক্তিত্বময়ী নারী চরিত্র ।
  • চরিত্র – রমেশ, কমলা, হেমনলিনী,  নলিনাক্ষ।

   ‘গোরা’ :   
  • ‘গোরা’ মহাকাব্যিক উপন্যাস । 
  • রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘতম উপন্যাস।
  • দেশ পত্রিকার বিচারে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাংলা উপন্যাস।
  •  ৪৪টি পরিচ্ছদ নিয়ে উপন্যাসটির প্রথম খণ্ড ১৩১৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে প্রকাশিত হয়।
  • উপন্যাসে কাহিনির পটভুমি প্রথমত ও প্রধানত কলকাতা মহানগরী।
  • উপন্যাসটি তত্ত্বধর্মী উপন্যাস ।
  • উপন্যাসটিকে ‘দেশাত্মবোধক উপন্যাস’ও বলা হয় ।
  • ‘উপণ্যাসটিকে ইউরোপের ‘Epic Novel’ সাথে তুলনা করা হয় ।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাস পরিকল্পনায় ভগিনী নিবেদিতার প্রত্যক্ষ প্রভাব নয় করেছেন।
  • চরিত্র– গোরা আনন্দময়ী, ললিতা, বিনয় ।

    ‘চতুরঙ্গ’ :    
  • সাধু ভাষায় লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর শেষ উপন্যাস ‘চতুরঙ্গ’।
  • এই উপন্যাস –এর পূর্ব নাম ছিল “দামিনী"।
  • রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে বিবেচিত হয়।
  • সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস।
  • উপন্যাসটি ‘জ্যাঠামশাই’, ‘শচীশ’, ‘দামিনী’ ও ‘শ্রীবিলাস’ নামের চারটি ছোটোগল্পের সমোবেশ ।
  • চরিত্র - শচীশ, দামিনী, শ্রীবিলাস, জগমোহন।
  • ২০০৮ সালে সুমন মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাস অবলম্বনে চতুরঙ্গ চলচ্চিত্রখানি নির্মাণ করেন।

     ‘ঘরে বাইরে’ :     
  • ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম চলিত ভাষা ব্যবহার করেন।
  • বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পটভূমিতে উপন্যাসটি রচিত।
  • রাজনৈতিক উপন্যাস। 
  • উপন্যাসটিকে দেশাত্মবোধক উপন্যাস বলা যায় ।
  • এই উপন্যাসে বিমলা - নিখিলেশ - সন্দীপ-  ---ত্রিকোন প্রেম কাহিনী প্রাধান্য পেয়েছে ।
  • উপন্যাস টি মোট ১৮ টি পরিচ্ছদে বিভক্ত  (‘বিমলার আত্মকথা’ -- ৭টি পরিচ্ছেদ , ‘নিখিলেশের আত্মকথা’ -- ৭টি পরিচ্ছেদ  এবং ‘সন্দীপের আত্মকথা ৪টি পরিচ্ছেদ ) ।
  • চরিত্র – বিমলা, নিখিলেশ, সাপ, অমুল্য।
  • ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাস অবলম্বনে ঘরে বাইরে চলচ্চিত্রখানি নির্মাণ করেন।

     ‘যোগাযোগ ‘ :      
  • ১৯২৯ বিচিত্রা মাসিকপত্রে ধারাবাহিকরূপে প্রকাশিত হয় (আশ্বিন, ১৩৩৪ - চৈত্র, ১৩৩৫)। 
  • উপন্যাসটি পত্রিকায় "তিনপুরুষ" নামে প্রকাশিত হয়।
  • উপন্যাসটি সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। 
  • লেখকের ইচ্ছে ছিল উপন্যাসে তিন পুরুষের কার্ষিনি লিপিবদ্ধ করার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু- পুরুষের কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছেন উপন্যাসে।
  • মনে করা হয় এটি অসমাপ্ত উপন্যাস ।
  • চরিত্র - কুমুদিনী, মধুসুদন দাস, শ্যামসুর ।

    ‘শেষের কবিতা’:    
  • প্রথমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উপন্যাস -এর নাম দিয়েছিলেন “মিতা"।
  • রোম্যান্টিক-মনস্তাত্ত্বিক কাব্যিক উপন্যাস।
  • এই উপন্যাসটি কে 'চম্পু কাব্য ও (সংস্কৃত মতে গদ্য পদ্য মিশ্র রচনা কে 'চম্পু কাব্য' বলে) বলা হয়।
  • বুদ্ধদেব বসু-র মতে - “রবীন্দ্রনাথের ‘নবজন্ম' ঘটেছিল শেষের কবিতা -য়।”
  • উপন্যাসের ২৭ পৃষ্ঠায় আছে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথা (‘‘ও পড়তে লাগল সুনীতি চাটুজ্যের বাংলা ভাষার শব্দতত্ত্ব’’) ।
  •  রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
  • চরিত্র - অমিত, লাবণ্য,  শোভনলাল।

   ‘দুইবোন‘ :   
  •  এটি পরকীয়া-বিষয়ক মিলনান্তক উপন্যাস।
  • উপন্যাসটি প্রথমে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
  • উপন্যাসের দুইবোন --- শর্মিলা ও উর্মিমালা ।
  • উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নারী প্রেমের জয় ঘটিয়েছেন । 
  • উপন্যাসটি রাজশেখর বসুকে উৎসর্গ করেন । 
   ‘মালঞ্চ’ :    
  • সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। 
  • নরনারীর জটিল সম্পর্ক নিয়ে রচিত রবীন্দ্রনাথের একটি সংক্ষিপ্ত উপন্যাস।
  • ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় । 
  • ‘দুিইবোন’ উপন্যাসের সাথে এর মিল রয়েছে ।
  • উপন্যাসটি পরকীয়ামূলক উপন্যাস ।
  • উপন্যাসটি বিয়োগান্তক ।
  • চরিত্র -- নীরজা, আদিত্য, সরলা, রমেন ।

    ‘চার অধ্যায়’ :   
  • রবীন্দ্রনাথর শেষ উপন্যাস । 
  • এটি  রাজনৈতিক উপন্যাস। 
  • বিপ্লবের পটভূমিকায় উপন্যাসটি রচিত । 
  • ‘এলা’ ও ‘অতীনের’ ভালোবাসায় এই উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু ।
  • উপন্যাসটি প্রকৃত --- ‘a lyric in prose’ ।
  • ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসের সাথে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায় ।
  • রবীন্দ্রনাথ নিজেই এই উপন্যাসকে ‘লিরিকের তোড়া’ বলেছেন ।
  • এই উপন্যাসের কাহিনীর সাথে রবীন্দ্রনাথের ‘রবিবার’ গল্পের সম্পর্ক আছে ।
  • চরিত্র -- অতীন্দ্র, এলা, ইন্দ্রনাথ, বটু ।

   উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের কৃতিত্ব :   
         রবীন্দ্রনাথ মূলত কবি, ভাবরসেই তাঁর আত্মার মুক্তি। ঔপন্যাসিকের যে ধরনের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্লেষণমূলক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন গীতিকবিরা ঠিক সে জাতের শিল্পী নন। কাজেই রবীন্দ্রনাথের অনেক উপন্যাসে বাস্তব চিত্রগুলি কল্পনার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। সেইজন্য সাধারণ পাঠক রবীন্দ্রকবিতায় মুগ্ধ হলেও তাঁর উপন্যাসের জনপ্রিয়তা শিক্ষিত সমাজের মধ্যেই অধিকতর সীমাবদ্ধ । যাই হোক, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসও যে একটা অসাধারণ শিল্পকর্ম এবং বাংলা উপন্যাসের নতুন দিক নির্দেশক তাতে সন্দেহ নেই।

1 comment