Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

বাংলা সাহিত্যের খ্যাত্যিমান ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী।

নারী অধিকার আর সমাজ পরিবর্তনের জন্য যে কয়েকজন মহিলা সাহিত্যিক লড়েছেন আমৃত্যু, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলাসাহিত্যের খ্যাত্যিমান ঔপন্যাসিক, ...

নারী অধিকার আর সমাজ পরিবর্তনের জন্য যে কয়েকজন মহিলা সাহিত্যিক লড়েছেন আমৃত্যু, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলাসাহিত্যের খ্যাত্যিমান ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী। অনেক পরিচয় তাঁর। সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি তিনি রাজনীতি করেননি, কোনো সংগঠনও করেননি। লড়েছেন নিজের কলম দিয়ে। নারীর জন্য এমন সদা সঞ্চারণশীল কলম বড় একটা দেখা যায়নি।

    পরিচয় :  
        ১৯০৯ সালের ৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার পটলডাঙায় মামার বাড়িতে আশাপূর্ণা দেবী জন্মগ্রহন করেন । পৈত্রিক নিবাস হুগলি জেলার বেগমপুর গ্রামে। পিতা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত, মাতা সরলাসুন্দরী দেবী। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতাতে। আশাপূর্ণা দেবী ঠাকুমার রক্ষণশীলতায় বড় হয়েছেন। সেখানে বাড়ির মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহনের সুবিধা দেওয়া হত না । পরবর্তী কালে পিতা হরেন্দ্রনাথ নিজের পরিবার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে তার মা সরলাসুন্দরী দেবী নিজের ইচ্ছেমতো মেয়ের পড়াশোনা করাণ,এবং তিনি পড়াশোনা করার স্বাধীনতা পান। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও আশাপূর্ণা দেবী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের গর্ব। তিনি তিন হাজারের বেশী ছোটো গল্প, বেশ কিছু উপন্যাস, ৩০ টির বেশী ছোটো গল্প সংকলন, ৫০ টির মতো শিশুদের কাহিনি, অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই জীবনাবসান ঘটে।

    রচনা পরিচয় :    
        আশাপূর্ণা দেবী ছিলেন সৃজনশীল কথাশিল্পী। তার কলম থেকে বহতা নদীর মতো লেখারা কলকল করে বেরিয়ে আসত। বহুবিধ বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেন । বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তাঁর রচনার মূল উপজীব্য। তবে নারীর শোষণ-বঞ্চনা আর শৃঙ্খল মুক্তির স্বপ্নের কথা লিখেছেন সবচেয়ে বেশি। স্বপ্ন দেখেছেন সমাজ পরিবর্তনের। তাঁর রচনায় স্বদেশচিন্তা ও সমাজ ভাবনাও প্রবলভাবে উপস্থিত। মননশীলতায় ঋদ্ধ তাঁর লেখনী।

    প্রথম রচনা :     
(a) প্রথম রচনা ' বাইরের ডাক ' (কবিতা) যা প্রকাশিত হয়ে ছিল ১৩২৯ বঙ্গাব্দে ' শিশুসাথী' পত্রিকায়। ১৪ বছর বয়সে রচনা করেন ।
(b) প্রথম ছোটোদের জন্য বই ‘ছোটো ঠাকুরদার কাশীযাত্রা’, প্রকাশিত হয় ১৩৪৫ বঙ্গাব্দে (১৯৩৮ খ্রীঃ) ।
(c) ১৩৪৩ বঙ্গাব্দের শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর বড়দের জন্য লেখা প্রথম ছোটোগল্প ‘পত্নী ও প্রেয়সী’।
(d) প্রথম প্রকাশিত ছোট গল্প সংকলন 'জল আর আগুন '(১৯৪০)।
(e) প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘প্রেম ও প্রয়োজন’, প্রকাশকাল ১৩৫১ বঙ্গাব্দ (১৯৪৪ খ্রীঃ) ।

     ত্রয়ী উপন্যাস :   
(a) ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ (১৯৬৪) 
(b) ‘সুবর্ণলতা’ (১৯৬৬)
(c) ‘বকুলকথা’ (১৯৭৩) 
(এই তিনটি উপন্যাসে তিনি নারীর আত্মকাহিনী তুলে ধরেছেন। প্রথম প্রতিশ্রুতিতে সত্যবতীর কাহিনী, সুবর্ণলতা তে সত্যবতীর মেয়ে সুবর্ণলতা আর বকুলকথা তে সত্যবতীর নাতনি ও সুবর্ণলতার মেয়ে বকুলকথার পরিচয় পাওয়া যায়। এই তিনিটি উপন্যাসে তিনি ত্রিকালের তিন নারীকে প্রতিনিধি করে তিনযুগে নারীজীবনের তিনটি দিক তুলে দরেছেন।এই সআ উপন্যাস পড়লে আমরা জানতে পারি তিনি অনেক বেশী নারী জীবন ও সামাজ জীবনকে বেশীগুরুত্ব দিয়ে ছিলেন। )

    উপন্যাসসমূহ ঃ   

  • ‘প্রেম ও প্রয়োজন’ (১৯৪৪)
  • ‘মিত্তির বাড়ী’ (১৯৪৭)
  • ‘বলয়গ্রাস’ (১৯৫২)
  • ‘অগ্নিপরীক্ষা’ (১৯৫২)
  • ‘কল্যাণী’(১৯৫৪)
  • ‘নির্জন পৃথিবী’ (১৯৫৬)
  • ‘শশীবাবুর সংসার’ (১৯৫৬)
  • ‘অতিক্রান্ত’ (১৯৫৭)
  • ‘উন্মোচন’ (১৯৫৭)
  • ‘জনম জনম কি সাথী’ (১৯৫৮)
  • ‘নেপথ্য নায়িকা’ (১৯৫৮)
  • ‘আংশিক’ (১৯৬০)
  • ‘ছাড়- পত্র ’(১৯৬০)
  • ‘নবজন্ম’ (১৯৬০)
  • ‘যোগবিয়োগ’ (১৯৬০)
  • ‘সমুদ্র নীল আকাশ নীল’ (১৯৬০)
  • ‘উত্তরলিপি’(১৯৬০)
  • ‘মুখররাত্রি’ (১৯৬১)
  • ‘উত্তরণ’ (১৯৬৩)
  • ‘বহিরঙ্গ’ (১৯৬৩)
  • ‘প্রেম যুগে যুগে’ (১৯৬৪)
  • ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ (১৯৬৪)
  • ‘সুবর্ণলতা’ (১৯৬৬)
  • ‘লঘু ত্রিপদী’ (১৩৭০)
  • ‘জীবনস্বাদ’(১৩৭০)
  • ‘শুক্তি সাগর’ (১৩৭১)
  • ‘বকুলকথা’ (১৯৭৩)
  • ‘নীটফল’ (১৯৮৮)
  • ‘যার বদলে যা’ (১৯৮৯)
  • ‘চিত্রকল্প’ (১৯৮৯)


গল্পগ্রন্থ :

  • ‘জল আর আগুন’
  • ‘নষ্টকোষ্ঠী ’
  • ‘ভুল ট্রেনে উঠে ’
  • ‘মজারি মামা’
  • ‘কখনো কাছে কখনও দূরে’
  • ‘আশাপূর্ণার শ্রেষ্ঠ গল্প’
  • ‘কিশোর সাহিত্য সমগ্র’

    পুরস্কার ও সম্মান :    
(a) মাত্র পনেরো বছর বয়সে 'খোকা খুকু' পত্রিকায় ১৩৩০ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যায় "স্নেহ" নামে একটি কবিতা লিখে প্রথম সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
(b) তিনি প্রথম প্রতিশ্রুতি - র জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৭৬) পান ।
(c) এছাড়া তিনি রবীন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬), সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৯৪), পদ্মশ্রী (১৯৭৬) খেতাব লাভ করেন।
(d) বিশ্বভারতীর দেশীকত্তম থেকে অনেক ডিলিট উপাধি ও সোনার মেডেল পেয়েছিলেন।

     উপন্যাস সাহিত্যে আশাপূর্ণার গুরুত্ব :    
                বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে আশাপূর্ণা দেবীর গুরুত্ব অপরিসীম।
(১) অধ্যাপক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, 'কোনো কোনো উপন্যাসে গার্হস্থ্য জীবনের সঙ্গে বহির্জগতের আকর্ষণ কিছুটা বিসদৃশভাবে মিশিয়াছে কোথাও বা রোমান্সের সুলভ বর্ণপ্রক্ষেপ এই ধূসর সমস্যাক্ষুব্ধ জীবনে কিছুটা বৈচিত্র্য আনিয়ছে। কিন্তু লেখিকার জীবন নিরীক্ষার সত্যসার এই গৃহজীবনের মধ্যেই নিহিত আছে।
(২) যৌথ পরিবার এবং ভেঙে যাওয়া পরিবার জীবনের সমস্যার কথা আশাপূর্ণা দেবী তাঁর উপন্যাস সাহিত্যে নিপুণ হস্তে ফুটিয়ে তুলেছেন।
(৩) শরৎচন্দ্রের মতো সাধারণ কথাকে তিনি অসাধারণ করে তুলেছেন।
(৪) আশাপূর্ণা দেবী তাঁর উপন্যাসে নতুন কালের পটভূমিকায় একান্নবর্তী পরিবারকে উপস্থাপিত করেছেন।
(৫) উপন্যাসে হাস্য ও করুণ রস সৃষ্টিতে আশাপূর্ণা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। 

No comments