Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

লীলা মজুমদার :

বিশ শতকের প্রথমার্ধে আবির্ভূত বাংলা সাহিত্য সরণির বিশিষ্ট পথিক বর্গের মধ্যে এক অবিস্মরণীয় নাম লীলা মজুমদার। তদানীন্তন মহিলা সাহিত্যিক মহলে ...

বিশ শতকের প্রথমার্ধে আবির্ভূত বাংলা সাহিত্য সরণির বিশিষ্ট পথিক বর্গের মধ্যে এক অবিস্মরণীয় নাম লীলা মজুমদার। তদানীন্তন মহিলা সাহিত্যিক মহলে ও এক ব্যতিক্রমী ধারার স্রষ্টা। তার পূর্বসূরি এবং সমকালীন লেখিকা বৃন্দের কলমে যখন উঠে আসে ইতিহাস -কল্পনার বর্ণময় জগত, সামাজিক সংকট, নারী মনস্তত্ত্ব, সেখানে তিনি এক ভিন্ন পথের দিশারী। শিশুমন, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য জীবনধারার সংঘাত তার সাহিত্যের বিষয় হয়ে ওঠে বিশেষ করে উপন্যাস গুলিতে
পরিচয়ঃ
        সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে ঘেরা বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারের সুযোগ্যা সন্তান হিসেবে লীলা মজুমদার ১৯০৮ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। মা সুরমা দেবী, বাবা বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রমদা রঞ্জন রায় । লেখিকা হিসেবে যেমন তার সমধিক পরিচিত ছিল, তেমনি সফল ছিলেন পত্রিকা সম্পাদনার ক্ষেত্রেও।দীর্ঘ সময় জুড়ে শিশুদের জন্য প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য পত্রিকা "সন্দেশের "যুগ্ম সম্পাদিকা ছিলেন। প্রখর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সৃষ্টির অবিরাম ধারাকে অব্যাহত রাখেন আমৃত্যু। ২০০৭ সালের ৫ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
রচনাবলীঃ
       শতায়ু লীলা মজুমদারের লেখার সঠিক তথ্য আজও পাওয়া যায় নি। জীবনীকার প্রসাদরঞ্জন রায়ের হিসাব মতো 289টি বইয়ের উল্লেখ পাওয়া গেছে ।  মধ্যে রয়েছে একটি গল্প সংকলন, পাঁচটি সহ লেখিকা রূপে, নয়টি অনূদিত গ্রন্থ এবং 19 টি সম্পাদিত গ্রন্থ।
প্রথম রচনাঃ
(a) ১৯২২ সালে সন্দেশ পত্রিকায় প্রথম গল্প "লক্ষীছাড়া" (লক্ষ্মীছেলে) রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। রচনাটি ১৯২২ সালে “সন্দেশ” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
(b) প্রথম গ্রন্থগ্রন্থ "বদ্যিনাথের বাড়ি" (১৯৩৯)। 
(c) প্রথম উপন্যাস - ‘হলদে পাখির পালক’ (1957) ।
(d) আত্মজীবনী মূলক রচনা :  ‘পাকদন্ডী’ (1986)।

উপন্যাসসমূহঃ
        তাঁর রচিত উপন্যাস সমূহ :
১) 'হলদে পাখির পালক' (১৯৫৭)
২) 'জোনাকী' (১৯৫৮)
৩) 'শ্রীমতী' (১৯৫৮)
৪) 'ঝাঁপতাল' (১৯৫৮)
৫) 'গুপির গুপ্ত কথা' (১৯৫৯)
৬) বক ধার্মিক' (১৯৬০)
৭) 'চীনে লণ্ঠন' (১৯৬৩)
৮) ‘টংলিং’ (১৯৬৩)
৯) 'মাকু' (১৯৬৮)
১০) 'নেপোর বই' (১৯৬৯)
১১) 'ফেরারী' (১৯৭১)

গল্পগ্রন্থ ঃ
        তাঁর রচিত গল্পগ্রন্থ :
১) 'বদ্যিনাথের বড়ি' (১৯৪০)
২) 'দিন দুপুরে' (১৯৪৮)
৩) 'ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প' (১৯৫৫)
৪) 'মনিমালা' (১৯৫৬)
৫) 'লাল নীল দেশলাই' (১৯৫৯)
৬) 'বাঘের চোখ' (১৯৫৯)
৭) ‘ইস্টিকুটুম’ (১৯৫৯)
৮) ‘টাকা গাছ’ (১৯৬১)
৯) 'গুণু পণ্ডিতের গুণপনা' (১৯৭৫)
১০) 'বহুরূপী' (১৯৭৬)
১১) ‘হট্টমেলার দেশ’ (১৯৭৭)
১২) ‘হীরে মতি পান্না’ (১৯৭৮)
১৩) 'ভুতের গল্প' (১৯৭৮)
১৪) 'সেজো মামার চন্দ্র যাত্রা' (১৯৮২)
১৫) 'আজগুবি' (১৯৮২)
১৬) 'বাঁশের ফুল' (১৯৮২)
১৭) 'ছোটোদের বেতাল বজ্রিশ' (১৯৮২)
১৮) 'সব ভুতুড়ে' (১৯৮৩)
১৯) 'গুণী পানুর কীর্তিকলাপ' (১৯৮৬)
২০) 'ভুতের বাড়ি (১৯৮৬)
২১) 'মামাদাদুর ঘোড়াবাজি' (১৯৮৯)
২২) 'আগুনি (বগুনি' (১৯৯১)
২৩) 'আম (গা আম' (১৯৯১)
২৪) 'পটকা চোর' (১৯৯১)
২৫) 'বেড়ালের বই' (১৯৯২)
২৬) 'চিচিং ফাঁক' (১৯৯৪)
২৭) 'বাঘ শিকারী বামুন'
২৮) 'মণি মানিক' (২০০০)
স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ ঃ
            লীলা মজুমদার রচিত স্মৃতিচারণামূলক রচনা :
১) ‘আর কোনখানে  - ১৯৬৭
২) ‘খেরোর খাতা’ -  ১৯৮২
৩) ‘পাকদণ্ডী’ -  ১৯৮৬
নাটক ঃ
        লীলা মজুমদার রচিত নাটক :
১) ‘বক বধ পালা’ -  ১৯৫৯
২) ‘গাওনা’ -  ১৯৬০
৩) ‘লঙ্কা দহন পালা’ -  ১৯৬৪
জীবনীমূলক গ্রন্থ :
১) 'এই যা দেখা' (১৩৬৩)
২) 'কবি কথা' (১৯৬১)
৩) 'উপেন্দ্রকিশোর' (১৯৬৩)
৪) 'অবনীন্দ্রনাথ' (১৯৬৬)
৫) 'সুকুমার' (১৯৮৯)
প্রবন্ধ – নিবন্ধ : 
        লীলা মজুমদার রচিত প্রবন্ধ – নিবন্ধ : 
১)  ‘হাতি হাতি’ -  ১৯৫৭
২) ‘রান্নার বই’ - ১৯৭৯
৩) ‘ভুতোর ডাইরি’ -  ১৯৭৯
৪) ‘জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি’ -  ১৯৮৬
৫) ‘আমি নারী’ -  ১৯৮৯
৬) ‘আমিও তাই’ - ১৯৮৯
৭) ‘সংসারের খুঁটিনাটি ও শিশুদের নামকরণ’ -  ১৯৯০
৮) ‘যে যাই বলুক’ - ১৯৯২
৯) ‘হালকা খাবার’  ১৯৯৩
অনুবাদমূলক রচনা:
        লীলা মজুমদার রচিত অনুবাদমূলক রচনা :
১) ‘চার বিচারকের দরবার’ - ১৯৬০
২) ‘নদীকথা’ - ১৯৭১
৩) ‘ভারতে বিদেশী যাত্রী’ - ১৯৭১
৪) ‘চার বিচারকের দরবার’ - ১৯৭৪
৫) ‘বাঘদাঁত’ - ১৯৭৫
৬) ‘গালিভারের ভ্রমণ বৃত্তান্ত’ - ১৯৮৩
পুরষ্কার ও সন্মাননা :
        সারা জীবনে লীলা মজুমদার অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ঃ
১) 'হলদে পাখির পালক' (১৯৫৭) উপন্যাসের জন্য তিনি 'স্টেট পুরস্কার' ও 'শিশু সাহিত্য পুরস্কার' লাভ করেন।
২) 'বক বধ পালা' (১৯৫৯) নাটকের জন্য তিনি 'সঙ্গীত নাটক একােডমী পুরস্কার পেয়েছেন।
৩) 'আর কোনোখানে' (১৯৬৭) স্মৃতিচারণা মুলক গ্রন্থের জন্য তিনি ১৯৬৯ সালে 'রবীন্দ্র পুরস্কার' পেযেছেন।
৪) বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'দেশিকোত্তম' প্রদান করে ।
৫) কলকাতা এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি-লিট প্রদান করে।
লীলা মজুমদারের রচনার বিশেষত্বঃ
(a) শিশুমনের উপযোগী সরস গল্প ও অ্যাডভেঞ্চারের গল্প তাঁকে জনপ্রিয় এবং শক্তিমান লেখিকার স্বীকৃতি দান করেছে।
(b) চিরপুরাতন শিশুর নবীন, সুকুমার, মধুর মুর্তি র প্রতি গভীর ভালবাসাই তাঁকে শিশুসাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে নিরন্তর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
(c) তাঁর গল্পসম্ভার এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে পশু- পাখির প্রতি সহমর্মিতা, কল্পবিজ্ঞান, দুঃসাহসিক অভিযান, এবং শিশুমনের ভয় কে জয় করার কাহিনি।

1 comment