Page Nav

HIDE

Classic Header

{fbt_classic_header}

NEW :

latest

‘কালবৈশাখী’ কবিতার আলোচনা :

  দশম শ্রেণীর ‘সাহিত্য সম্ভার’ বইয়ের প্রতিটি বিষয় আমাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । আজকের আলোচনা ‘কালবৈশাখী’ । ‘‘কালবৈশাখী”     ...

 দশম শ্রেণীর ‘সাহিত্য সম্ভার’ বইয়ের প্রতিটি বিষয় আমাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । আজকের আলোচনা ‘কালবৈশাখী’ ।



‘‘কালবৈশাখী”
                             - মোহিতলাল মজুমদার
মধ্যদিনের রক্ত নয়ন অন্ধ করিল কে !
ধরণীর 'পরে বিরাট ছায়ার ছত্র ধরিল কে !
কানন-আনন পাণ্ডুর করি
জলস্থলের নিশ্বাস হরি
আলয়ে-কুলায়ে তন্দ্রা ভুলায়ে গগন ভরিল কে!

আজিকে যতেক বনস্পতির ভাগ্য দেখি যে মন্দ,
নিমেষ গনিছে তাই কি তাহারা সারি সারি নিস্পন্দ?
মরুৎ-পাথারে বারুদের ঘ্রাণ
এখনি ব্যাকুলি তুলিয়াছে প্রাণ?
পশিয়াছে কানে দূর গগনের বজ্রঘোষণ ছন্দ?

হেরি যে হোথায় আকাশকটাহে ধূম্র মেঘের ঘটা,
সে যেন কাহার বিরাট মুন্ডে ভীমকুন্ডল জটা!
অথবা ও কিরে সচল অচল -----
ভেদিয়া কোন্ সে অসীম অতল
ধাইছে উধাও গ্রাসিতে মিহিরে , ছিড়িয়া রশ্মিছটা !

ওই শোনো তার ঘোর নির্ঘোষ ,দুলিয়া উঠিল জটাভার
শুরু হয়ে গেছে গুরু -গুরু রব--নাসা -গর্জন ঝঞ্ঝার ।
পিঙ্গল হল গলতলদেশ,
ধূলিধূসরিত উন্মাদবেশ----
দিবসের ভাগে টানিয়া খুলিছে বেণিবন্ধন সন্ধ্যার ।

অঙ্কুশ কার ঝলসিয়া উঠে দিক হতে দিক-অন্তে !
দিগ্ বারণেরা বেদনা-অধীর বিদারিছে নভ দন্তে ।
বাজে ঘন ঘন রণদুন্দুভি,
ঝরে সে আওয়াজ কভু যায় ডুবি ,
যুঝিতেছে কোন্ দুই মহাবল দ্যুলোকের দূর পন্থা!

বঙ্কিম-নীল অসির ফলকে দেহ হল কার ভিন্ন?
অনাবৃষ্টির অসুরের বাধা কে করিল নিশ্চিহ্ন ?
নেমে আসে যেন বাঁধ -ভাঙা জল,
ম্লান হয়ে আসে মেঘকজ্জল,
আলোকের মুখে কালো যবনিকা এতখনে হল ছিন্ন ।

হেরো, ফিরে চলে সে রণবাহিনী বাজায়ে বিজয়শঙ্খ,
আকাশের নীল নির্মল হল ---ধৌত ধরার পঙ্ক ।
বায়ু বহে পুন মৃদু উচ্ছ্বাসে
নদী উথলিছে কুলুকুলু ভাষে,
আলো-ঝলমল বিটপীর দল নিশ্বাসে নিঃশঙ্ক ।

নববর্ষের পুণ্য বাসরের কালবৈশাখী আসে ।
হোক সে ভীষণ, ভয় ভুলে যাই অদ্ভুত উল্লাসে ।
ঝড়-বিদ্যুৎ বজ্রের ধ্বনি ---
দুয়ার জানালা উঠে ঝনঝনি---
আকাশ ভাঙিয়া পড়ে বুঝি , তবু প্রাণ ভরে আশ্বাসে ।

চৈত্রের চিতা-ভস্ম উড়ায়ে জুড়াইয়া জ্বালা পৃথ্বীর,
তৃণ-অঙ্কুরে সঞ্চারি রস , মধু ভরি বুকে মৃত্তির,
সে আসিছে আজ কাল-বৈশাখে---
শুনি টংকার তাহার পিনাকে
চমকিয়া উঠি ---তবু জয় জয় তার সেই শুভ কীর্তির।

এত যে ভীষণ, তবু তারে হেরি ধরায় ধরে না হর্ষ
ওরি মাঝে আছে কাল-পুরুষের সুগভীর পরামর্শ ।
নীল-অঞ্জন-গিরি-নিভ কায়া ,
নিশীথনীরব ঘনঘোর ছায়া ----
ওরি মাঝে আছে নববিধানের আশ্বাস দুর্ধর্ষ ।


    লেখক পরিচিতি :    

           মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮–১৯৫২) : রবীন্দ্র সমকালীন উল্লেখযোগ্য কবি। ধ্রুপদী রীতির কবিতায় বিশেষ প্রসিদ্ধি অর্জন করেন। কবিতার রূপকল্পে নানা পরীক্ষানিরীক্ষায় উজ্জ্বল তাঁর লেখনী। দেহবাদী আখ্যায় তিনি ভূষিত হয়েছিলেন। নিজস্ব কাব্যভাষার জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তাঁর স্বপনপসারী, স্মরগরল, হেমস্তগোধূলি প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। মননশীল সমালোচক হিসাবে তিনি স্মরণীয়।

     উৎস :   
              মোহিতলাল মজুমদারের ‘হেমন্ত গোধূলী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ।

    বিষয় অল্প কথায়:    
  • কালবৈশাখীর আবির্ভাব হয় নববর্ষের কোন এক পবিত্র দিনে। সে তার রুদ্র তাণ্ডবে ধরনীর বুকে নিয়ে আসে মহাপ্রলয়। 
  • ভীষণ তার রূপ, ক্ষতি করবার ক্ষমতা তার অপরিসীম। তবু প্রাণের আশায় ও আশ্বাসে সে ভরপুর হয়ে ওঠে। 
  • পুরাতন বছরের সমস্ত জীর্ন জঞ্জালের রৌদ্রদগ্ধ চিতাভস্ম উড়িয়ে সে জুড়িয়ে দেয় পৃথিবীর জ্বালা। 
  • রুদ্রবেশে ভয়ঙ্কর রূপে কালবৈশাখীর আবির্ভাব যতই বীভৎস হোক না কেন তবুও কালবৈশাখীর সংঘ লাভ করে পৃথিবী আজ আনন্দোজ্জ্বল হয়েছে। নতুন সৃষ্টির আভাসে পুলকিত হয়েছে। 
  • আসলে কালবৈশাখীর দুরন্ত ধ্বংসলীলার মাঝেই রয়েছে অতি প্রচ্ছন্নভাবে সৃষ্টির সুনিশ্চিত আশ্বাস। তাই রুদ্র 
  • কালবৈশাখী মানুষের কাছে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হয়।

    নামকরণের খুঁটিনাটি :    
  • কালবৈশাখী’ কবিতাটির মধ্যে আপাত ভীষণতার বা ভয়ঙ্করতার অন্তরালে রয়েছে নবসৃষ্টির সুনিশ্চিত আশ্বাস। অন্ধকারের অন্তরেতেই লুকিয়ে থাকে পূর্ণ আলো।
  • আসলে কালবৈশাখীর দুরন্ত ধ্বংসলীলার মাঝেই রয়েছে অতি প্রচ্ছন্নভাবে সৃষ্টির সুনিশ্চিত আশ্বাস। তাই রুদ্র কালবৈশাখী মানুষের কাছে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হয়।
  • কবিতাতে ‘কালবৈশাখী’ কথাটিকে বার বার ধ্রুবপদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে ‘কালবৈশাখী’ কথাটিই কবির অভিপ্রায়।

    রসবিচার :   
         ‘কালবৈশাখী’ কবিতাটির মধ্যে আপাত ভীষণতার বা ভয়ঙ্করতার অন্তরালে রয়েছে নবসৃষ্টির সুনিশ্চিত আশ্বাস। অন্ধকারের অন্তরেতেই লুকিয়ে থাকে পূর্ণ আলো। দুঃখ বেদনার অনন্ত সলিলে উত্থিত হয় অমৃত ভাণ্ড নিয়ে সুখৈশ্চর্যময়ী লক্ষ্মী। সুখের প্রত্যাশায় মানুষ হেঁটে চলে কিন্তু সুখ নাহি দেয় ধরা। 'দুঃখের অমারাত্রির মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হয় জীবন। আসলে সমস্ত সৃষ্টির পেছনে কোন না কোন দুঃখের ইতিহাস থাকে। আর থাকে আনন্দ রসের প্রচ্ছন্ন অঙ্গীকার। সৃষ্টি ও ধ্বংশের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আনন্দ ও দুঃখের স্রোতোধারায় উদ্ভুত রসই এ কবিতার রস বৈশিষ্ট্যকে অন্যমাত্রায় সংযোজিত করেছে।


No comments